এ দেশের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ প্রতিবন্ধী। এদের শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরীর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ১৯৬২ সালে সমাজসেবা অধিদফতর শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পি,এইচ,টি,সি সেন্টার) শহীদ আসাদ গেইট, ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন সমাজসেবা অধিদফতর ১৯৮৭ সালে শারীরিক, মানসিক প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র শহীদ আসাদ গেইট, ঢাকার কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও যুগোপযোগী করার উদ্দেশ্যে নরওয়ের ৩ (তিন) টি স্বেচছাসেবী সংগঠন যথাঃ
(১) নরওয়েজিয়ান এ্যাসোসিয়েশন অব দ্যা ব্লাইণ্ড এন্ড পার্শ্বিয়ালী সাইটেড,
(২) নরওয়েজিয়ান এ্যাসোসিয়েশন অব দ্যা ডেফ ও
(৩) নরওয়েজিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা মেন্টালী রিটার্ডেড
এর আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সম্মুখসহ দক্ষিণ পশ্চিম কোণের জায়গার পরিবর্তে ঢাকার মিরপুরসহ-১৪ নম্বর সেকশনে ৬.০০ (ছয়) একর জমির উপর ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমাজসেবা অধিদফতরাধীন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দক্ষিণ এশিয়ার মডেল ইনস্টিটিউট হিসেবে বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে।
মূল উদ্দেশ্যঃ
এদেশের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠির এক বিরাট অংশ হচ্ছে প্রতিবন্ধী । এদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সৃষ্টি, বিশেষ শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণসহ সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন ও উদ্ধুদ্ধকরণে সহায়তা প্রদান করে সমাজের মূল স্রোত ধারায় একীভূত করা এ কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য।
কার্যক্রমের বিবরণঃ
জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ অবস্থিত। এ কলেজে বিশেষ শিক্ষায় দক্ষ শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে ১০৫ আসন বিশিষ্ট এক বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ( বি.এস. এড) ও ১০৫ আসন বিশিষ্ট মাস্টার্স অব স্পেশাল এডুকেশন ( এম.এস. এড) ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এ কলেজের ল্যাবরেটরী স্কুল হিসেবে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ( বুদ্ধি,বাক ও শ্রবণ, দৃষ্টি) এবং একটি মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে ৪ টিতে ৪০১ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। ছেলে-মেয়েদের জন্য পৃথক পৃথক ৭(সাত) টি আবাসিক হোস্টেল এবং বি.এস.এড প্রশিক্ষণার্থীদের একটি সহ মোট ৮(আট) টি হোস্টেল রয়েছে। এ কেন্দ্রে বর্তমানে ৬১১ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজঃ
ক্র: নং |
কোর্সের নাম |
মোট আসন |
আবাসিক আসন সংখ্যা |
অনবাসিক আসন সংখ্যা |
মন্তব্য |
|
০১ |
ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন |
বি এস এড এ আসন সংখ্যা ১০৫।
এম এস এড এ বর্তমানে আসন সংখ্যা ১০৫
|
৭০
|
১৪০ |
*জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ১ (এক) বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর কোর্স বিএসএড চালু আছে। পূর্বে আসন সংখ্যা ছিল ৫০, বর্তমানে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষ হতে বিএসএড আসন সংখ্যা ১০৫ তে উন্নীত করা হয়েছে। *২০২০ শিক্ষা বর্ষ হতে এমএসএড কোর্স চালু করা হয়েছে। আসন সংখ্যা-১০৫। |
|
০২ |
|
রিসোর্স সেকশনঃ
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রমকে সহজ, সাবলীল ও কার্যকরী করার লক্ষ্যে রিসোর্স সেকশনের ৩টি শাখা যথাক্রমে, টিচিং এইড, হিয়ারিং এইড এবং লাইব্রেরি রয়েছে। লাইব্রেরির এ শাখায় প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য সাধারণ বিষয়ের প্রায়ই ৫ হাজার বই ও সাময়িকী রয়েছে । এর মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের প্রভাষক, অতিথি বক্তা ও প্রশিক্ষণার্থীসহ কেন্দ্রের সকল শ্রেণির পাঠকের পাঠ সেবা প্রদান করে যাচ্ছে । টিচিং এইড শাখায় বুদ্ধি , শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে বিশেষ শিক্ষা উপকরণ তৈরি, ক্রয় ও বিতরণসহ বিভিন্ন উপরকরণের প্রাথমিক মেরামতের ব্যবস্থা রয়েছে।
উপরোক্ত কার্যক্রম ছাড়াও এ দুটি শাখার কর্মকর্তাগণ কলেজের ব্যবহারিক ক্লাসে সহযোগিতা প্রদান ও বি এস এড কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রয়োজনে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করে থাকেন।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহের কার্যক্রমঃ
বুদ্ধি , শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে ৪টি মডেল বিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধাসহ ৭ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি এসএসসি পর্যন্ত চালু আছে। এ বিদ্যালয়গুলো বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের বি এস এড কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের পাঠদান অনুশীলনের জন্যে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র /ছাত্রীর গবেষণার (থিসিস) কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৬-১১ বছরের মৃদু ও মাঝারী পর্যায়ের যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুর স্কুলে ভর্তির জন্যে প্রতি বৎসর ডিসেম্বর মাসে ফরম বিতরণ করা হয়। তবে, এসেসমেন্ট কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত শিশুরা আসন শূন্য সাপেক্ষে সংশিষ্ট স্কুলে সম্পূর্ণ বিনা খরচে ভর্তি হতে পারে।
ক্রমিক নং |
বিদ্যালয়ের নাম |
অনুমোদিত আসন সংখ্যা |
বর্তমানে অনাবাসিক ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা |
বর্তমানে আবাসিক ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা |
বর্তমান স্কুলে অধ্যয়রত মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা |
||
০১ |
সরকারি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় |
৫০ |
ছেলে ২৮ |
মেয়ে ১৩ |
ছেলে ২২ |
মেয়ে ১০ |
৭৩ |
০২ |
সরকারি শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় (১ম শ্রেণি-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত) |
প্রাইমারী ৭০ মাধ্যমিক-৮০ |
ছেলে ৬৬ |
মেয়ে ৩৯ |
ছেলে ৯৪ |
মেয়ে ৫৯ |
২৫৮
|
০৩ |
সরকারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় (১ম শ্রেণি-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত) |
৭০ |
ছেলে ১০ |
মেয়ে ১০ |
ছেলে ৩০ |
মেয়ে ২০ |
৭০ |
মোট- |
|
২৭০ |
১০৪ |
৬২ |
১৪৬ |
৮৯ |
= ৪০১ |
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ঃ
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৫০ তবে বর্তমানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৩। এর মধ্যে ২২ জন ছেলে ও ১০ জন মেয়ের জন্যে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। বাকী ৪১ জন অনাবাসিক, ছেলে ২৮ জন মেয়ে ১৩ জন । এ বিদ্যালয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে উপযোগী বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এদের কারিকুলাম প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম হতে কিছুটা সহজ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। শারীরিক সমস্যাগ্রস্ত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি , স্পিচ থেরাপী ও অকুপেশনাল থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ঃ
শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের আবাসিক মোট আসন সংখ্যা ১৫০। এর মধ্যে ৯৪ জন ছেলে ও ৫৯ জন মেয়ের জন্যে আবাসিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। ১০৫ জন অনাবাসিক (ছেলে/মেয়ে) ভর্তি আছে। এ বিদ্যালয়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে যোগাযোগের জন্যে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন ইশারা ভাষা, সার্বিক যোগাযোগ পদ্ধতি । তাছাড়া এদের কথা বলার প্রশিক্ষণ ও হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিদ্যালয়ের পাঠদানে ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম অনুসরণে ১০ম শ্রেণিপর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ঃ
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৭০। তন্মধ্যে ৩০ জন ছেলে ও ২০ জন মেয়ের জন্যে আবাসিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। বাকী ২০ জন অনাবাসিক । এখানে ১ম - ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলিত কারিকুলাম অনুসরণ করে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণ, গণিত শেখার জন্যে এবাকাস,টেইলর ফ্রেমের ব্যবহার ও নিরাপদ চলাচলের জন্যে ওরিয়েন্টেশন ও মবিলিটি, সাদাছড়ি ব্যবহার, সাইটেড গাইড প্রশিক্ষণ ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে।
অন্যান্য কার্যক্রম:
১। প্রতিবন্ধীদের শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য লেখা পড়ার পাশাপাশি মেধা বিকাশমূলক কো-কারিকুলাম এ্যাক্টিভিটিস নিয়মিত সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, আর্ট, পেইন্টিং, চিত্রাংকন, শরীর চর্চা, স্কাউটিং ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অত্র কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের পরামর্শমূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
২। এটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ। ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ১০৫ আসন বিশিষ্ট মাস্টার্স অব স্পেশাল এডুকেশন ( এম.এস.এড) ডিগ্রী চালু হয়েছে। যেখানে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক সহ ৪৩ টি নতুন জনবলের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
৩। ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ( বি.এস.এড) কোর্সটি পূর্বে ৫০ আসন বিশিষ্ট ছিল। ২০১৯ সাল হতে ১০৫ আসনে উন্নীত করা হয়।
৪। কেন্দ্রের আওতাধীন সকল ধরনের প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিশেষায়িত কলেজ ( এইচ এস সি) চালুর জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে যা আগামী শিক্ষাবর্ষে কার্যক্রম শুরূ হবে।
৫। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের অধীনে বিদ্যমান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ( মেয়েদের) বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক পর্যায়ে ( এস,এস,সি) তে উন্নীত করার বিষয়টি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে।
৬। জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালিত ‘‘ বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ’’ এ ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন ( বি.এস.এড) কোর্সের ১০০ আসন বিশিষ্ট সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর বিষয়টি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
৭। জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের অধীনে ৩(তিন) মাস ব্যাপী স্বল্প মেয়াদী ‘‘ ইশারা ভাষা ও ব্রেইল পদ্ধতির’’ প্রশিক্ষণ শিরোনামে ২ টি কোর্স চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
৮। বিএসএড কোর্সে বাক ও শ্রবণ,দৃষ্টি, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিভাগের সাথে নতুন করে অটিজম বিভাগ চালু করনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
শিক্ষা পদ্ধতিঃ
জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের স্কুলগুলোতে সাধারণ স্কুলের মত ন্যাশনাল কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। তবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কারিকুলাম প্রাথমিক শিক্ষার প্রজলিত কারিকুলাম হতে কিছুটা সহজ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এখানে ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হয়। যেমন-
* বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের-বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থিওরি, ওয়ার্ক এনালাইসিস, মডেলিং, চেইনিং,শেইপিং, প্রম্পটিং,রিইনফোর্সমেন্ট,পেস্ন -থেরাপী, মিউজিক থেরাপী ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
* প্রতিটি ছাত্রের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা পরিকল্পনা (আই.ই.পি) তৈরি করা হয়।
* শারীরিক সমস্যা গ্রস্থ শিশুদের জন্য নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ও স্পীচ থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে।
* বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইশারা ভাষা, সর্বিক যোগাযোগ পদ্ধতি, এদের কথা বলা প্রশিক্ষণ ও হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
* দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হয়। এছাড়া গণিত শিখানোর জন্য এবাকাস ও নিরাপদ চলাচলের জন্য ওরিয়েন্টেশন ও মবিলিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
শিক্ষা সহায়ক অন্যান্য কার্যক্রমঃ
প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে-
* কেন্দ্রের ৩টি বিদ্যালয়ের সকল প্রতিবন্ধী শিশুর জন্যে এ,ডি,এল (দৈনন্দিন কার্যাবলী) প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
* প্রতিবন্ধী শিশুদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য স্কুলে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ- আর্ট, পেইন্টিং, সেলাই, বস্নক প্রিন্ট, হ্যান্ড গস্নাস পেইন্ট, কাটিং, পেস্টিং, স্বাস্থ্য ও যত্ন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু আছে।
* মানসিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে একজন অভিজ্ঞ সংগীত শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে নিয়মিত সংগীত শিক্ষা দেয়া হয়। তাছাড়া শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের অভিনয় ও নৃত্য এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আবৃত্তি ও গল্প বলা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী করে তোলার ব্যবস্থা রয়েছে।
* প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধূলার ব্যবস্থা আছে । এর জন্য একটি বড় খেলার মাঠ রয়েছে এবং একজন অভিজ্ঞ শরীরচর্চা শিক্ষক আছেন। তাছাড়া স্কাউটিং বিষয়ে কেন্দ্রস্থ ৪টি বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকার স্কাউট প্রশিক্ষণ রয়েছে , যাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিবন্ধী শিশুদের বয়েজ স্কাউট ও গার্লস গাইড প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
হোস্টেল কার্যক্রমঃ
কেন্দ্রে মোট ২৩৫ জন বুদ্ধি, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্যে পৃথক পৃথক আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি খরচে এদের খাবার, প্রসাধনী, পোষাক ও ঔষধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এদের তত্ত্বাবধায়নের জন্যে হাউজ প্যারেন্ট, মেট্রন ও এটেনডেন্ট রয়েছেন।
চিকিৎসা সুবিধাঃ
কেন্দ্রের সকল প্রতিবন্ধী শিশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্যে একজন খন্ডকালীন ডাক্তার ও একজন সার্বক্ষণিক নার্স (সিনিয়র স্টাফ নার্স) নিয়োজিত রয়েছেন।
যানবাহন সুবিধাঃ
কেন্দ্রের ৪টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের অনাবাসিক ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে আনা নেয়ার জন্যে ৩২ আসন বিশিষ্ট ১টি স্কুল বাস রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের জন্যে ১টি সচল প্রাইভেট কার রয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এ পর্যন্ত সকল কার্যক্রমের সফলতা :
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দানের একমাত্র সরকারি কলেজ হিসেবে অত্র কলেজ সারা দেশের প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একবছর মেয়াদি বি এস এড কোর্সসহ স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরূ করে ২০২০ পর্যন্ত ব্যাচেল অব স্পেশাল এডুকেশন (বিএসএড) কোর্সের সমাপ্তকৃত ব্যাচের সংখ্যা ২৪ টি এবং এ পর্যন্ত ৫২৬ জন প্রশিক্ষণর্থী বি এস এড ডিগ্রী নিয়ে বিভিন্ন সরকারি, অসরকারি কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। ২০২০ শিক্ষাবর্ষ হতে ১০০ আসন বিশিষ্ট এমএসএড কোর্স চালু হয়। এছাড়া তিনটি বিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সাল হতে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় ও আমত্মর্জাতিক প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করে সয়লতা অর্জন করে আসছে। তাছাড়া অত্র কেন্দ্রের অভ্যমত্মরে অবস্থিত বাক - শ্রবণ, দৃষ্টি ও মানসিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০ জন করে প্রতিবন্ধী শিশু প্রাথমিক সমাপনী , জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে এবং শতভাগ উর্ত্তীন হচ্ছে। এ সব প্রতিবন্ধীরা অভ্যমত্মরে প্রাক-প্রাথমিক ভকেশনাল প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছে। তারা নিজেদের জীবনে, পরিবারে ও সমাজের উন্নয়নে সাধারনের ন্যায় সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ তালিকাঃ
ক্রমিক |
প্রশিক্ষণের নাম |
প্রশিক্ষণার্থী |
১ |
ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন(বিএসএড) |
বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক এবং অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষক হতে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রী। |
২ |
মাস্টার্স অব্ স্পেশাল এডুকেশন(এমএসএড) |
|
৩ |
অভিভাবক কাউন্সেলিং |
|
৪ |
পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি |
|
৫ |
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ |
|
৬ |
শিশু আইন, নিউরো-ডেভেলপমেন্টোল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাষ্ট আইন-২০১৩ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন- ২০১৩ |
|
৭ |
বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষণ (ব্লক প্রিন্ট, হ্যান্ড গ্লাস পেইন্ট , কাটিং পেস্টিং, স্বাস্থ্য ও যত্ন, আর্ট, পেইন্টিং ও সেলাই |
|
৮ |
প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ |
|
৯ |
শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুতকরণ প্রশিক্ষণ |
|
১০ |
শিক্ষক অভিভাবক মতবিনিময় সভা |
|
১১ |
যৌন হয়রানি ও শিশু নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ |
|
১২ |
ব্রেইল প্রশিক্ষণ |
|
১৩ |
ইশারা ভাষা প্রশিক্ষণ |
|
১৪ |
প্রতিবন্ধিতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ |