Wellcome to National Portal
সমাজসেবা অধিদফতর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৬ August ২০২১

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাফল্যগাঁথা

 
সফলতার গল্প-১
 
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে নরসুন্দর সম্প্রদায়ের বদলে যাওয়ার গল্প 
 
বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জে শত শত সাফল্যের গল্পের একটি হল সেলুন কল্যাণ সঞ্চয় সমিতি গঠন। বাজিতপুরে সেলুন পেশার সাথে জড়িত ১০০ জন লোক এ প্রকল্প থেকে অনুপ্রানিত হয়ে সঞ্চয় সমিতি গঠন করেছেন। তাদের প্রত্যেকের মাসিক আয় ছিল ১০,০০০-১৫,০০০ টাকা। কিন্তু তাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা ছিলনা। প্রশিক্ষণ শেষে তারা প্রত্যেকে বুঝতে পারেন তাদের সঞ্চয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তাদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে। তাদের সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষায় একটি পেশাভিত্তিক সংগঠনও দরকার।
 
 
তাছাড়া বাজিতপুরেই বিভিন্ন ইউনিয়নে চুল কাটার পারিশ্রমিক বিভিন্ন রকম। প্রশিক্ষণ শেষে প্রাপ্ত অনুদান দিয়ে কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন হওয়ায় পারিশ্রমিক সামাজিক পুঁজি গঠন তথা পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা,সহমর্মিতাও সৃষ্টি হয়। ১০০ জন সেলুন/ শীল সম্প্রদায়ের লোকজন বৃদ্ধি করে গড়ে তুলেন বাজিতপুর সেলুন কল্যাণ সঞ্চয় সমিতি। প্রত্যেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে সঞ্চয় প্রদান করবেন। বর্তমানে উক্ত সমিতিতে ৩,৫৮,০০০/- (তিন লক্ষ আটান্ন হাজার) টাকা জমা হয়েছে।  কঠোর নিয়মের  মধ্য দিয়ে পরিচালিত উক্ত সমিতির মূল উদ্দেশ্য সমূহ:
১. গুরুতর বিপদগ্রস্থ কোন সদস্যের পরিবারকে যথা নিয়মে সহায়তা করা বা পাশে দাড়ানো।
২. সেবার মান বৃদ্ধি করে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা এবং একই মানের বজায় রাখা।
৩. নিজেদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে পারস্পারিক আস্থা, বিশ্বাস , মর্যাদা, শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করে নিজেদের জীবন মানের উন্নয়ন।
 
 
সফলতার গল্প-২
 
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আদি পেশায় স্বাবলম্বী লালমনিরহাটের সঞ্জয় কুমার  

শ্রীঃ সঞ্জয় কুমার শর্মা (২১), পিতাঃ শ্রী জদুনাথ শর্মা, মাতাঃ দিপীকা রানী শর্মা, ঠিকানাঃ মোমিনপুর ২ নং ওয়ার্ড  ইউনিয়ন জোংড়া, উপজেলাঃ পাটগ্রাম, জেলাঃ লালমনিরহাট। অত্যন্ত মেধাবী একটি ছেলে। অভাবের সংসারে ছোট বেলা থেকেই জন্মসূত্রে শর্মা পরিবারের এ ছেলেটি বাবার অবর্তমানে পরিবারের খরচ চালাতে গিয়ে তাকে অন্যের সেলুনের দোকানে কাজ শুরু করতে হয়। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালেই মানুষের দোকানে কম্পিউটারের কাজের হাতেখড়ি হয় তার। কিন্তু এতকিছু করার পরেও দিন শেষে লেখাপড়ার কাজটা ঠিকই সে চালিয়ে যায়। এর মধ্যে সে জেএসসি পাশ করে। পড়াশোনার পাশাপাশি মানুষের দোকানে কাজ করাও অব্যাহত থাকে। সেই সাথে সে একে একে বিদ্যুৎ এবং ডিস এন্টিনার কাজও ভালোভাবে শিখে ফেলে এবং এসব কাজ করে সে আয় বাড়াতে থাকে। পিইসি, জেএসসির পর এরই মধ্যে এস,এস,সিও কৃতিত্বের সাথে পাস করে সঞ্জয় শর্মা।

সেলুনের কাজটিকে মূল পেশা হিসেবে রেখে বর্তমানে সে কম্পিউটারের অপারেশনাল সকল কাজ, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার রিলেটেড যেকোনো সমস্যা সমাধান করা, বিদ্যুৎ ও ডিস এন্টিনার সংযোগ দেয়া ও যেকোনো সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করেছে সে। তার কাছে প্রতিটি সময়ই মূল্যবান। সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলা এ ছেলেটি এই বয়সেই একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। একসময় অন্যের দোকানে কাজ করা ছোট্ট সঞ্জয় এখন তার নিজের সেলুন দোকানে কর্মচারী রেখেছে ০২(দুই) জন। এছাড়া তার কম্পিউটার সার্ভিসিং এর দোকান এবং ইলেকট্রনিক্স এর দোকান রয়েছে। 

মানুষের জন্য কাজ করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সে ইতোমধ্যেই নিজের কম্পিউটারের দোকানের ছোট্ট পরিসরে এলাকার অনেককে বিনা খরচে কম্পিউটারের বেসিক ট্রেইনিং দিয়েছে। ছোট্ট বয়সেই পরিবারের হাল ধরা সঞ্জয় নিজ এলাকার বাইরে পাশ্ববর্তী উপজেলাতেও তার কাজের জন্য সুপরিচিত এবং একজন সৎ ছেলে হিসেবে স্বীকৃত। ২০২০ সালের আসন্ন এইচ,এস,সি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থী সঞ্জয় পাটগ্রাম উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একজন অনুসরণীয় ও সক্রিয় সদস্য। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট হতে সে ২০১৯-২০ অর্থবছরের কোটায় বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ০৩ (তিন) দিনের সফ্‌ট স্কিলস্‌ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।

 

সফলতার গল্প-৩
 

দিনমজুর থেকে উদ্যোক্তা 

বোটন রবিদাস। পিতা: ভিখারী রবিদাস, মাতা: লালমুখী রবিদাস। বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম: উত্তর ঘণেশ্যাম, ডাক: তুষভান্ডার, উপজেলা: কালীগঞ্জ, জেলা: লালমনিরহাট। তিন ভাই ও চার বোন, পিতা মাতাসহ মোট ৬ জনের অতিকষ্টের সংসার ছিলো বোটন রবিদাসের। লেখাপড়া করেছে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটতো বোটনদের। তাই ছোটবেলাতেই বাবার মাধ্যমেই জুতা শেলাইয়ের কাজে হাতে খড়ি হয় বোটন বরিদাসের। প্রথমে স্থানীয় বাজারেই ব্যবসা শুরু করেন। জুতা শেলাই,জুতা কালি করে দৈনিক ১০০-২০০ টাকা আয় হতো; যা চাহিদার তুলনায় অতি সামান্য। বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে অভাবে বাধ্য হয়েই ঋণ গ্রহণ করেন বোটন রবিদাস। দিন দিন ঋণের পরিমান বৃদ্ধি পেতে  থাকে। এক পর্যায়ে বেশি আয়ের আশায় পাড়ি জমান ঢাকার উদ্দেশ্যে। দীর্ঘদিন কষ্ট করার পর একজন জুতা প্রস্তুতকারীর কাছ থেকে জুতা তৈরি করতে শিখেন এবং সেখানেই দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এমন সময় তুষভান্ডার ইউনিয়ন পরিষদ হতে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন “ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতাধীন ৩ দিনব্যাপী সফ্ট স্কিলস প্রশিক্ষণ ” সম্পর্কে জানতে পারেন।

 

 

প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করেন। তারপর  ৩ দিনব্যাপী সফ্ট স্কিলস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং এককালীন অনুদান হিসেবে ১৮,০০০/= (আঠারো হাজার) টাকা পান। সেই ১৮,০০০/= টাকাসহ সামান্য ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ করে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজারে ভাড়া করা ঘরে মাত্র ২টি ছোট মেশিন দিয়ে শুরু করেন চামড়ার জুতা ও স্যান্ডেল তৈরির কারখানা। এই কারখানা পাল্টে দেয় বোটন রবিদাসের জীবন। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তার কারখানা। বর্তমানে এই কারখানায় ৪ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বোটনের দৈনিক আয় ৩০০০/= থেকে ৪০০০/=। বোটন রবিদাস এখন আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছল। সংসারের অভাব আর আগের মতো নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছে। বোটনের স্বপ্ন সে একদিন সফল ব্যবসায়ী হবে। বোটন জানান, সফ্ট স্কিল্স প্রশিক্ষণ এবং এককালীন অনুদানের ১৮,০০০ টাকা  তার জীবনের এক অনন্য প্রাপ্তি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি ব্যবসা, পুঁজি বিনিয়োগ,ক্রেতা বিক্রেতা সম্পর্ক, বিপনন প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেনু। ফার্স্ট এইড বক্স এর ব্যবহার শিখেছেন। বোটন রবিদাস উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়, কালীগঞ্জ এর প্রতি এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। বোটন রবিদাস সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।